পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময়ী ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী" নিকোলা টেসলা"



নিকোলা টেসলা একজন সার্বিয়ান -আমেরিকান উদ্ভাবক যিনি ১৮৫৬ সালের ১০ জুলাই অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য (বর্তমান ক্রোয়েশিয়ায়)জন্মগ্রহণ করেছিলেন।প্রচণ্ড প্রতিকূল আবহাওয়া ও বজ্রপাতের রাতে এই মহামানব পৃথিবীতে এসেছিলেন। খারাপ ও ভয়ঙ্কর আবহাওয়ার রাতে জন্মগ্রহণ করার কারণে মানুষ তাকে “Child of Darkness” বলেছিল।কিন্তু তার মা তাকে  “Child of Light” বলেছিলেন। বাস্তবেও কিন্তু তাই হয়েছিল। তার আবিষ্কৃত AC কারেন্টই সমগ্র পৃথিবীকে আলোকিত করেছে এবং আমাদের দিয়েছে এই আধুনিক পৃথিবী।ছোটবেলা থেকেই তার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল বিদ্যুৎ, বজ্রপাত ইত্যাদি।তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি নিজের শরীরের ভিতর দিয়ে ১ মিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ পরিবহন করে বাতি জ্বালিয়ে দেখিয়েছেন।বজ্রপাতের শক্তিও তার কাছে ছিল তুচ্ছ যা টেসলার কোন ক্ষতি করতে পারে নি।তার ছাড়া বিদ্যুৎ পাঠিয়ে সফল হয়েছিলেন তিনি কিন্তু এতে ব্যবসায়িক লাভ না থাকায় টেসলাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।একটানা ৪৮ ঘন্টা কাজ করার পর তিনি ২-৩ ঘন্টা ঘুমাতেন ও অন্যদের এই ব্যাপারটিকে নিজেকে  ব্যাটারির চার্জ দেওয়ার সাথে উদাহরন দিতেন।শেষদিকে তিনি এমন সব আবিষ্কার ও ডিজাইন করেছিলেন যা পোস্ট সম্পুর্নভাবে না পড়লে কারও পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব না।তিনজন নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানী টেসলার মৃত্যুর পরে জানিয়েছিলেন "নিকোলা টেসলা বিশ্বের অন্যতম একজন বুদ্ধিমান ও প্রতিভাবান ব্যাক্তি, যিনি আধুনিক সময়ের অনেক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে গিয়েছেন।

নিকোলা টেসলার নামের পাশে ছিল ৩০০ টির বেশি আবিষ্কারের প্যাটেন্ট এবং আবিষ্কারগুলো তার সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল।বর্তমানের অনেক উন্নত প্রযুক্তির পূর্বপুরুষ হলেন নিকোলা টেসলা।তার তৈরী induction motor ছাড়া বর্তমানের শিল্প- কারখানা কল্পনাও করা যায় না।টেসলা কয়েল ছাড়া রেডিও-টেলিভিশন  সম্ভব হত না।রিমোট কন্ট্রোল,বর্তমানের পাইলটবিহীন জাহাজ,বিমান,ড্রোন, রোবট ইত্যাদি প্রযুক্তি সহ আধুনিক অজস্র আবিষ্কারের মূল ভিত্তি হলেন টেসলা।টেসলার অনেক আবিষ্কার রয়েছে যেগুলোর পেটেন্ট না করার কারনে অন্য বিজ্ঞানীরা আইডিয়া চুরি করে পেটেন্ট নিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন।Radio,X-ray,Hidro Electric PowerRader System ইত্যাদি ছিল টেসলার আবিষ্কার যেগুলির আইডিয়া অন্য বিজ্ঞানীরা চুরি করে বিখ্যাত হয়েছিল।তার আবিষ্কারের সংখ্যা এত বেশি যে কারনে সবকিছু সর্ম্পকে লিখে শেষ করা সহজ কোন বিষয় না।তার
গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডিজাইন হচ্ছেঃ AC motor,Carbon button lamp,Death ray,Induction motor,Plasma globe,Plasma lamp,Polyphase system,Radio control,Resonant inductive coupling,Rotating magnetic field,Teleforce,Telegeodynamics,Teleoperation,Tesla coil,Tesla Experimental Station,Tesla's oscillator,Tesla turbine,Tesla valve,Torpedo,]Vacuum variable capacitor,Violet ray,VTOL,Wardenclyffe Tower,Wireless power transfer,World Wireless System ইত্যাদি।কিন্তু মিডিয়াগুলি কোন রহস্যময় কারনে তাঁর সর্ম্পকে বিস্তারিত লিখে নি, সেটা বুঝতে অনেকটাই কষ্ট হয়েছে।এই কারনে বেশিরভাগ মানুষই উনার সর্ম্পকে ভালভাবে জানে না।উনার বিষয়ে জানার জন্য ক্রমে ক্রমে যত গভীরে প্রবেশ করেছি, ততটাই অবাক ও আশ্চর্য হয়েছি।উনাকে নিয়ে বিস্তারিত পড়ার পর এতটুকু বুঝতে পারলাম যে, তিনি হলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী অন্যভাবে তিনি হলেন সকল বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী।এই পর্বে বিস্তারিত লিখতে চেষ্টা করেছি নিকোলা টেসলাকে নিয়ে যদিও উনাকে নিয়ে লিখে শেষ করা অসম্ভব।এই পোস্ট পড়ার আগে তথ্যসুত্রের ব্যাপারে জানানো জরুরি নতুবা অনেক কিছুই স্বপ্নের মত মনে হতে পারে।(তথ্যসূত্রঃ My Inventions: The Autobiography of Nikola Tesla,  The Fantastic Inventions of Nikola Tesla, The Tesla Papers,The man out of time,Wikipeda ইত্যাদি)
1888 সালের আসল টেসলা বৈদ্যুতিক মোটরগুলির একটি যেটি এখন পর্যন্ত  শিল্প ও গৃহস্থালীর সরঞ্জামগুলির প্রধান শক্তি। টেসলার বৈদ্যুতিক মোটর সর্বকালের সেরা দশটি  আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি।

স্কুলে ও কলেজে থাকা অবস্থায় তার প্রতিভার বিস্ময় প্রকাশিত হয়েছিল। বড় বড় ত্রিকোনামিতিক ক্যালকুলাস তিনি খাতা, কলম ছাড়াই ব্রেইনে চিন্তা করেই উত্তর বলে দিতেন।Engineering পড়ার সময়ে এক শিক্ষকের সাথে তার কোন একটা বিষয় নিয়ে দ্বিমত হয়। পরে সে প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা lab এ কাজ করে প্রমান করেন যে তার ধারনাই সঠিক। এই ঘটনা কলেজে ছড়িয়ে পড়লে তিনি সকলের কাছেই আরও বেশি বিস্ময়কর ছাত্র হয়ে ওঠেন। কিন্তু তখনও তার বিস্ময়কর আবিস্কার শুরু হয়নি।তার আত্নজীবনীতে লিখেছেন, আমার পদ্ধতি ছিল সম্পুর্ন ভিন্ন।আমি প্রথমেই  আসল কাজে যাই না। আমি যখন ধারণা পাই তখনই আমি কল্পনা মধ্যে বিল্ডিং শুরু করি।কল্পনার মাঝেই আমি কাজটিকে ইচ্ছামত পরিবর্তন করি ও উন্নতি করি।আমি আমার কল্পনার মধ্যেইপরীক্ষাটি সম্পুর্ন করি।এমনকি যদি এটি ভারসাম্যের বাইরে থাকে তবে আমি নোট করি। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে ফলাফলগুলি একই পেয়েছি।বিশ বছরে একটিও ব্যতিক্রম হয়নি।

হাই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পূর্ণ করার অল্প কিছুদিন পরেই তিনি কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।তিনি প্রায় মারা যাওয়ার মত অবস্থা ছিলেন এবং নয় মাস শয্যাশায়ী ছিলেন।চিকিৎসকরা বলেছিলেন যে, তিনি বেশি দিন বাঁচবেন না।তার পিতা-মাতা কান্না শুরু করে দিয়েছিল এবং তারা আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল।তখন তিনি তার বাবা-মাকে বলেছিলেনঃ"আমার একটি স্বপ্ন আছে। আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।  আমার আবিষ্কার দ্বারা আমি ভবিষ্যতে বিশ্ববিখ্যাত হতে চাই।"কিন্তু টেসলার বাবা তার জন্মের আগে সৃষ্টিকর্তার কাছে তাকে ধর্মযাজক বানাবেন বলে ওয়াদা করেছিলন এবং এই কথাটি টেসলাকে জানালেন।টেসলা উত্তর দিয়েছিলেন,"যদি আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে পারি তাহলে আমি সুস্থ হয়ে যাব এবং সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে।"
টেসলার বাবা সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে মৃত্যুশয্যায় থাকা পুত্রকে বলেছিলেন, "তোমার যা ইচ্ছা তুমি তাই হবে এবং আমি তোমাকে আশীর্বাদ করছি। সর্ম্পুন গ্রামকে অবাক করে দিয়ে টেসলা কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠলেন এবং স্কুলে যেতে শুরু করলেন।
তিনি তার জীবনীতে লিখেছেন, পর্দাথবিজ্ঞানের শিক্ষকের মাধ্যমে প্রথম বিদ্যুৎতের বিষয়ে আর্কষিত হয়েছিলেন।তিনি ক্যালকুলাসের মত বড় বড় গনিত খাতা-কলম ছাড়াই করে ফেলতেন।প্রথমে শিক্ষকরা ভাবতেন টেসলা কোন ভাবে ধোকা দিচ্ছে তাদের কিন্তু পরর্বতীতে তারা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিল।
১৮৭৪ সালে টেসলা অষ্ট্রো-হাঙেরির পক্ষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন।সে সময় একটি পাহাড়ে অবস্থান করেছিলেন। প্রকৃতি সাথে অবস্থান করে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছিলেন।তখন তিনি মার্ক টুয়েনের বই পড়তেন এবং যা তাকে পূর্বের অনেক অসুস্থতা থেকে সুস্থ করেছিল বলে তিনি লিখে গেছেন তার আত্মজীবনীতে।১৮৭৫ সালে তিনি অস্ট্রিয়ার গ্রাজ পলিটেকনিকে ভর্তি হন ও সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করেন।কলেজে ডীন তার বাবাকে চিঠিতে লিখেছিলেন"your son is a star of first rank".২য় বর্ষে অধ্যয়নকালে প্রজেক্টের কাজ নিয়ে একজন প্রফেসরের সাথে টেসলার প্রচন্ড বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং তিনি দিন-রাত কাজ করে তার চিন্তা বাস্তবায়ন করে নিজেকে প্রমান করেন।১৮৭৯ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি একটি পুরাতন চিঠি পেয়েছিলেন যেটি ছিল ঔ প্রফেসরের এবং চিঠিতে উল্লেখ ছিল,"টেসলাকে যদি এইস্থান থেকে নিয়ে যাওয়া না হয় তাহলে প্রচন্ড পরিশ্রমে করতে করতে সে মারা যাবে"।তিনি জুয়া খেলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় ৩য় বর্ষের শেষ সেমিষ্টারের সময় আর্থিক সংকট ও পরীক্ষার চাপে পড়ালেখার ইতি ঘটে এবং এই পর্যায়ে তার গ্রাজুয়েশন সম্পূর্ণ করা বাতিল হয়ে যায়।তখন তিনি গ্রাজ ছেয়ে মারিবোরে চলে যান এবং পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ায় তার  পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।মারিবোরে তিনি নকশাকারের কাজ করতেন। একইসাথে তিনি রাস্তায় বসে জুয়া খেলে দিন কাটাতেন।

১৮৮১ সালে টেসলা একটি টেলিগ্রাফ কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন এবং পরবর্বতীতে সেখানের প্রধান ইলেক্টশিয়ানে পরিনত হন।তখন তিনি সম্পুর্নভাবে একটি টেলিফোন আপ্লিফায়ার তৈরী করেন যা থেকেই পরর্বতীতে আবিষ্কার হয়েছিল টেলিফোন।টেসলা কাছে এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না যে কারনে তিনি পেটেন্ট ও এই আবিষ্কারের বিষয়ে জোরালো ভাবে  প্রকাশের প্রয়োজন বোধ করেন নি।১৮৮২ সালে টেসলা চাকরি পান কন্টিনেন্টাল এডিসন কোম্পানিতে যেটি ছিল প্যারিসে।একটি অজানা সমস্যার কারণে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ কাজ  বন্ধ ছিল।সমস্যা কি সেটা এডিসনসহ কেউই বের করতে পারছিল না।২৫০০০ ডলারের চুক্তিতে টেসলা শুধুমাত্র সমস্যাই বের করে দেন নি,একই সাথে সমাধানও করে দিয়েছিলেন।১৮৮৪ সালে পাওয়ার প্লান্টের কাজ শুরু হয়েছিল। তাদের নিকট টেসলাকে শুধুমাত্র পরার্মশদাতা ছাড়া কিছুই মনে হয় নি যে কারনে তারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।


১৮৮৪ সালে টেসলা আবারও চাকরির অফার পান এডিসনের মূল কোম্পানিতে যেটি আমেরিকায় অবস্থিত।একই সময়ে তিনি রাশিয়াতেও চাকরির অফার পেয়েছিল।তিনি ছিলেন সার্বিয়ান সুতরাং আমেরিকার চেয়ে তিনি রাশিয়ার হয়ে  কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চার্লস ব্যাচেলর যিনি ছিলেন কন্টিনেন্টাল কোম্পানির ম্যানেজার তিনি টেসলাকে   বলেছিলেনঃ"আমি বর্তমান সময়ের দুইজন জিনিয়াসকে চিনি, একজন হলেন এডিসন, অন্যজন হলেন আপনি(টেসলা)।টেসলাকে এডিসনের কোম্পানির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার অফার দেওয়া হয়।২৮ বছর বয়সি টেসলা তখন ছিলেন বেকার এবং এডিসনের মত এত বড় বিজ্ঞানীর সাথে থেকে  কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় আবারও তিনি রাজি হন কাজ করতে এবং আমেরিকায় পাড়ি জমান।টেসলা ১৮৮৪ সালে আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন, পকেটে ছিল চার সেন্ট, নিজের কয়েকটি কবিতা নিয়ে নিউইয়র্ক পৌঁছেছিলেন।টেসলাকে প্রধান ইঞ্জিনিয়ার না করে উল্টো নিজের যোগ্যতার প্রমান দিতে বলেন এডিসন এবং অপমানসুচক আচরন করেন।তখন টেসলার পকেটে ছিল মাত্র ৪ সেন্ট। এডিসনকে  নিজের যোগ্যতা দেখানো অথবা রাস্তায় ভিক্ষা করা এই ২ টি রাস্তাই তখন টেসলার  সামনে ছিল।
১৯৩৩ সালের জন্মদিনে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তার দাবি করা thought ক্যামেরা নামক যন্ত্রের বিষয়ে যেটির যে কারও সুপ্ত চিন্তা-ভাবনা সর্ম্পকে জানিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল। 




পরর্বতী ৬ মাস তিনি  দৈনিক ১৮-২০ ঘন্টা কাজ করতে থাকেন।D.C কারেন্ট নিয়ে কাজ করার সময় বুঝতে পারেন এটি যথাযথ নয় এবং তার নিজস্ব ভাবনায় কাজ করে আবিষ্কার করেন A.C(alternating current) কারেন্ট।এই A.C কারেন্টের জন্যই আজ সারাবিশ্বে এত সহজে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।অন্যদিকে D.C কারেন্টে বাতি ছাড়া অন্য কোন যন্ত্র চালানো সম্ভব না এবং এক মাইলের বেশি পাঠানো প্রায় অসম্ভব ছিল এবং যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য ছিল।এডিসনের কোম্পানি টেসলাকে D.C কারেন্টের উন্নত যন্ত্রের ডিজাইন করতে পারলে ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার দিবে বলে ঘোষণা জানায়।টেসলা প্রচন্ড পরিশ্রম করে ২৪ টি উন্নত যন্ত্রের ডিজাইন করে এডিসনকে দেখান। তারপর তিনি পুরষ্কারের ৫০ হাজার চাইতেই এডিসন উত্তর দেন তিনি ঠাট্টা করে এমন কথা বলেছিলেন এবং টেসলার বেতন ১৮ ডলার থেকে ২৬ ডলারে উন্নীত  করবেন।প্যারিসের ঘটনাকে ভুলে তিনি এডিসনের  সাথে ২য় বার কাজ চালিয়ে গেলেও এবার তিনি এই কোম্পানিকে চিরবিদায় জানান।
এডিসনের কোম্পানি থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি পরর্বতী সময়ে তিনি প্রচন্ড আর্থিক সংকটে পড়েন।প্রতিদিন নির্দিষ্ট টাকার ভিতরে একই ধরনের খাবার খেতেন এবং রাতে মেঝেতে ঘুমাতেন।অর্থকে কখনো গুরুত্ব না দেওয়া টেসলা  নিজের এই অবস্থাকে গ্রহণ করতে পারছিলেন না।ঐ মুহুর্তে সামান্য পরিমান টাকাও তার কাছে অনেক মূল্যবান ছিল।তিনি তখন দিনমজুর, রাস্তা কাটার মত কাজগুলো করেছিলেন।পরর্বতী দিন নিয়ে চিন্তা করার মত কোন অর্থ তার কাছে থাকত না।হঠাৎ করে সবকিছু পরিবর্তন হতে থাকে।তিনি ২ জন ব্যবসায়ীর সহায়তায় গড়ে তুলেন "টেসলা ইলেকট্রিক লাইট ও ম্যানুফেক্টারিং কোম্পানি। এই কোম্পানি নতুন টেসলার উদ্ভাবিত এক ধরনের  বাতি রাস্তায় লাগানোর কাজ করেছিল এবং অল্প সময়ে  অনেক পরিচিতি লাভ করেছিল।এক সময় সম্পূর্ণ আমেরিকা থেকে অর্ডার আসতে শুরু হয় এবং রাতারাতি তার জীবন অনেক বদলে যায়।তিনি বিশ্বাস করতেন অল্টারনেটিং কারেন্ট হচ্ছে ভবিষ্যৎ এবং ১৮৮৮ সালের মে মাসে এসি কারেন্টের পেটেন্টগুলির মালিক হন।এসি কারেন্টে তার পেটেন্ট লাভের পরই শুরু হয়ে যায় এ.সি বনাম ডি.সি বিদ্যুতের এক অদৃশ্য যুদ্ধ অন্যভাবে যা টেসলা বনাম এডিসনের লড়াই বলে বিবেচনা করা হয়।

জর্জ ওয়েস্টিংহাউজ এ.সি কারেন্টের বিষয়ে যখন  জানতে পারেন, তখন তিনি ১ মিলিয়ন ডলার ও ২০ ℅ শেয়ারে টেসলার সকল পেটেন্ট কিনে নেন।ওয়েস্টিংহাউজ তখন বুঝতে পেরেছিলেন এ.সি কারেন্ট অনেক দরকারি এবং পাওয়ার প্লান্ট থেকে অনেক দূরে বিদ্যুৎ পৌছানো সম্ভব।এরপরই টেসলার জীবনে নতুন যুগের সূচনা হয়।টেসলা এবং ওয়েস্টিংহাউজ যখন তাদের প্রথম এ.সি জেনারেটর চালু করেন তখনই এডিসন বুঝতে পারেন তার সময় শেষ হয়ে আসছে।এইজন্য এডিসন কোর্টে অভিযোগ করেন যে টেসলা তার পেটেন্টে চুরি করেছে কিন্তু কোর্টে এডিসন হেরে যান।এরপরই এডিসন নোংরাভাবে খেলতে শুরু করেন।এ.সি কারেন্ট সর্ম্পকে ভয় সৃষ্টি করতে এডিসন নিজস্ব প্রচেষ্টায় আদালতের মাধ্যমে ইলেকট্রিক চেয়ারের সাহায্যে  একজন মত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।কিন্ত এরপরও এ.সি কারেন্ট আরও বেশি জনপ্রিয় হতে থাকে ব্যাপকভাবে।এডিসন পোষা প্রাণী, এমনকি একটি হাতির বাচ্চাকেও পরিকল্পিতভাবে রাস্তায় এ.সি কারেন্টের মাধ্যমে  হত্যা করেন।অবশেষে এডিসনের কোম্পানি বাধ্য হয়ে এ.সি কারেন্ট উৎপাদন শুরু করে এবং এডিসন রাজি না হওয়ায় কোম্পানির অন্যদের সাথে প্রচন্ড বিরোধ সৃষ্টি হয়।এই বিষয়টিকে টেসলা তার জীবনীতে নিজেকে এডিসনের সাথে যুদ্ধে জয়ী বলে উল্লেখ করেছেন।
কালজয়ী সাহিত্যিক মার্ক টুয়েন টেসলার ল্যাবরেটরিতে।  

সাত বছর টেসলা হাই-ফ্রিকোয়েন্সি কারেন্ট ও ম্যাগনেটিক ফিল্ড নিয়ে গবেষনা করেন এবং অনেক যন্ত্রের পেটেন্ট লাভ করেন।"আমেরিকান ইন্সটিটিউট অফ ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার" তাকে আমন্ত্রন জানান তার সফলতার বিষয়ে একটি লেকচার দিতে এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঐ সময়কার বিখ্যাত সব ইঞ্জিনিয়াররা।সেখানে তিনি তাদের তার ছাড়া বিদ্যুৎ পরিবহন করে  বাতি জ্বালিয়ে দেখান এবং নিজের শরীরের ভিতর দিয়ে এক মিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ পরিবহন করে বাতি জ্বালিয়ে দেখান।
এটি ছিল অনেক বড় একটি সফলতা এবং তাকে ভবিষ্যতের অগ্রদূত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।তাকে তার কাজের সম্মান সূচক বিখ্যাত বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের চেয়ারে বসার অনুরোধ করা হয় যেটিতে ফ্যারাডে মারা যাওয়ার পর অন্য কেউ বসতে পারে নি।টেসলার সফলতাকে এডিসন মেনে নি পারছিলেন না।1898 সালে টেসলা রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা পরিচালিত একটি টেলিযোগাযোগ নৌকা আবিষ্কারের ঘোষণা করেছিলেন। সংশয় যখন প্রকাশিত হয়েছিল তখন টেসলা ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে সবার সামনে তার পক্ষে দাবি প্রমাণ করেছিলেন।

কিন্তু হঠাৎ করে ১৯৯৫ সালের মার্চে তার ল্যাবরেটরিতে আগুন লেগে যায় এবং তার ১০ বছরে পরিশ্রমের অনেক রের্কড পুড়ে যায়।এই ঘটনাতে এডিসন পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সন্দেহ করেন এবং টেসলার ল্যাবের কর্মচারীকে ঘুষ দিয়ে এই কাজ করানো হয় বলে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়।মাত্র ৬ মাসের ভিতরে তিনি তার অকল্পনীয় স্মৃতিশক্তির জোরে সবকিছু  আগের রূপে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেন ও তিনি তার ব্যবসা শুরু করেন।
টেসলা কয়েল" থেকে একটি বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দ্বারা তার ছাড়া বাতি হাতে নিকোলা টেসলা।

১৮৯৩ সালে নায়াগ্রা জলপ্রপাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সহজ উপায় নিয়ে গবেষনা করার জন্য তিনি প্রায় ১ লাখ ডলার টাকা পান যা দিয়ে হাউস্টন স্ট্রিটে একটি বিশাল ল্যাবরেটরি গড়ে তুলেন।সেখানে তিনি একটি অধুনিক অসিলেটর নির্মান করেন যা তিনি গবেষনার ব্যবহার করেন।যখন তিনি পরীক্ষটি শুরু করেন এর কিছু সময়ের মধ্যে হঠাৎ সবকিছু কাপঁতে শুরু করে যেমনটি ভূমিকম্পের সময় ঘটে।তখনই তিনি ভয়ে সবকিছু বন্ধ করে যেন এবং সাথে সাথে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এটির দ্বারা যে কিছুই ধ্বংস করা সম্ভব ছিল কিন্তু এটি দুর্ঘটনাবশত আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন।
বিখ্যাত সাহিত্যিক মার্ক টুয়েন সহ অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তিদের তিনি তার ল্যাবে নিয়ে গিয়েছিলেন।তিনি তাদেরকে অনেক আর্কষনীয় পরীক্ষা দেখান এবং ভবিষ্যতের বিজ্ঞান নিয়ে অনেক কিছু আলোচনা করেন।সেঞ্চুরি ম্যাগাজিনের চীফ ইডিটর রর্বাট জনসন ও তার স্ত্রী ক্যাথরিনের সাথে টেসলার গভীর বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছিল।মূলত তিনি ক্যাথরিনের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন কিন্তু জনসনকে তিনি তার ঘনিষ্ট বন্ধু মনে করতেন।জনসনকে জোর করে একদিন একটি ট্রেন যাত্রা থেকে বিরত রেখেছিলেন পরে যে ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়েছিল।উনি বলেছিলেন,এই দুর্ঘটনা সর্ম্পকে তিনি আগেই জানতেন এবং তার কাছে এটি অসাধারণ কিছু ছিল না।কারন তিনি নাকি ভবিষ্যত দেখতে পারতেন।টাইটানিক চালানোর আগে তিনি নাকি নিষেধ করেছিলেন কিন্তু কেউ তার কথা শুনে নি।

নিকোলা টেসলা তার কলোরাডো ল্যাবরেটরিতে ম্যাগনিফাইং ট্রান্সমিটারসহ ক্রিয়াকলাপে যেখানে মিলিয়নের বেশি ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করেছিলেন

কলোরাডো স্প্রিংয়ে ১৮৯৯ সালের মে মাসে, টেসলা, তার বেশ কয়েকজন সহকারী একটি পরীক্ষাগার নির্মাণ করেছিলেন যেখানে তিনি তারবিহীন বিদ্যুতের বিষয়ে গবেষণার পরীক্ষা করেছিলেন।ল্যাবটি এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে বড় টেসলা কয়েল ধারণ করেছে, যার ব্যাস ৪৯.২৫ ফুট (১৫.০১ মিটার), যা ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ারে স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা করা ম্যাগনিফাইং ট্রান্সমিটারের প্রাথমিক সংস্করণ।এছাড়া পাইকস পিক থেকে প্যারিসে সংকেত প্রেরণ করে ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরিকল্পনা করেছিলেন।তিনি কয়েক মিলিয়ন ভোল্ট এবং 135 ফুট (41 মিটার) লম্বা কৃত্রিম বজ্রপাত উৎপাদন করেছিলেন।এটিই ছিল মানুষের তৈরী প্রথম কৃত্রিম ব্জ্রপাত।তিনি বজ্রপাতের শক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎকে তার ছাড়া মাটিকে মাধ্যম হিসেবে অনেক দূর পাঠানোর বিষয়ে ভেবেছিলেন।তারপর তিনি এই বিষয়ে তার পরীক্ষা শুরু করেন।ল্যাবের কিছু দূর পর্যন্ত মাটিতে ২০০ টি বাতি রাখেন।মেশিনটি যখন কাজ করা শুরু করে তখন ট্রান্সফরমার প্রচন্ড গতিতে বিদ্যুৎকে মাটির মধ্যদিয়ে পরিবাহিত করতে থাকে।প্রথমে তার ল্যাবের বাতিগুলো জলে উঠে।কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠের সকল বাতিগুলো জ্বলে ওঠে তার ছাড়া বিদ্যুৎ পরিবহনে সফল হয়ে যান।লোকাল পাওয়ার স্টেশনগুলি এত শক্তিশালী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিল না যার ফলে সেখানের ১০ কি.মির মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সকল মেশিন পূড়ে যায়।তখন রাস্তায় হাঁটতে থাকা লোকেরা তাদের পা এবং মাটির মধ্যে ঝাঁকুনি ও  স্পার্ক লক্ষ্য করেছিল।এরপরই তিনি এই বিষয়ে পত্রিকায় আর্টিকেল লিখেন।জে.পি মরগান নামের একজন বিখ্যাত শিল্পপতি তাকে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে রাজি হন যা দিয়ে তিনি ঐতিহাসিক  ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ার নির্মাণ করেছিলেন।তিনি তার ছাড়া বিদ্যুৎ পাঠানো নিয়ে কাজ করার বিষয়ে ভাবলেও মরগান অনেক দূরে রেডিও সিগনাল পাঠানোর বিষয়ে প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে বলেছিলেন।পরবর্তীতে টেসলা তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে মরগান ওডেনক্লীফ প্রজেক্ট চলমান অবস্থায় বিনিয়োগ বন্ধ করে দেন যার ফলে গবেষনা আটকে যায় এবং পরবর্তীতে প্রজেক্ট বাতিল হয়ে যায়।টেসলার তারবিহীন বিদুৎতের বিষয়ে  মরগানের ব্যবসায়িক লাভ হবে না চিন্তা করে  বিনিয়োগ বন্ধ করেন যার ফলশ্রুতিতে বর্তমান সভ্যতা একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার থেকে বঞ্চিত হয়।টেসলার নির্মিত ওডেনক্লীফ টাওয়ার ১৯১৭ সালে ধ্বংস করে দেওয়া হয় কারণ জার্মানরা এটিকে রেডিও ট্রান্সমিশনের কাজে ব্যবহার করে আমেরিকার তথ্য চুরি করতে পারে এমন
সন্দেহের কারনে।কিন্ত টেসলা দাবি করেছিলেন
ওডেনক্লীফ প্রজেক্ট থেকে তিনি অনেক বড় কিছু অর্জন করতে পেরেছিলেন।
টেসলার নির্মিত ওডেনক্লীফ টাওয়ার।
পৃথিবীর সেরা রহস্যময় ঘটনা গুলোর একটি সাইবেরিয়ার তুংগাসায় ঘটেছিল ১৯০৮ সালে ৩০ জুন।টেসলার দাবি, কোন প্রানের  ক্ষতি হবে না এই চিন্তা করে বায়ুমন্ডলের আয়নোস্ফিয়ারের সাহায্যে প্রচুর শক্তি সাইবেরিয়ার জনমানবশূন্য তুংগাস্কায় পাঠিয়েছিলেন এবং সেখানে এটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। সমগ্র উত্তর গোলার্ধের মানুষ দেখেছিল সেদিন বিস্তৃত আলো যেটি তিনি তৈরী করেছিলেন।এই ঘটনাটির সাথে সসন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত তুংগাস্কায় উল্কাপিন্ড পতিত হওয়ার ঘটনার সাথে মিলে যায় যেটিও ১৯০৮ সালের ৩০ জুন ঘটেছিল।
  তুংগাস্কার রহস্যময় ঘটনার পরে ঐ অঞ্চলের চিত্র।   

তাছাড়া টেসলাকে জোর করে একটি গোপনীয় চুক্তিপত্রে সাক্ষর করানো হয়েছিল  যার ফলে তার পক্ষে অনেক কিছুই প্রকাশ করা অসম্ভব ছিল।তিনি যে কয়টি ভয়াবহ আবিষ্কারের কথা বলেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল Death Ray।এটি এমন একটি যন্ত্র যা ২৫০ মাইল দূর থেকে ১০ হাজার যুদ্ধ বিমানকে এক সাথে ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব ছিল।এই বিষয়টি জানার পর তাকে সম্পূর্ণ নজরদাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল।তার এই আবিষ্কার দিয়ে মিলিটারি ও যুদ্ধক্ষেত্রে একটি পক্ষকে অনেক এগিয়ে দিবে এই চিন্তা করে এই যন্ত্রটিকেও তিনি নষ্ট করে ফেলেছিলেন।তিনি মিলিটারি ও যুদ্ধ দুটিকেই ঘৃণা করতেন।

তিনিই সর্বপ্রথম রিমোট প্রযুক্তি ও একমাত্র ব্যাক্তি যিনি রিমোট কন্ট্রোল জাহাজ ও প্লেন উদ্ভাবনের বিষয়ে ভেবেছিলেন।।১৮৯৮ সালের প্রর্দশনীতে তিনি রিমোট কন্ট্রোল জাহাজের খেলনা দেখিয়েছিলেন।দূর থেকে কন্ট্রোল করে জাহাজকে ইচ্ছানুযায়ী গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব ছিল। মিলিটারিরা যখন  যুদ্ধজাহাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার সুফলের বিষয়ে ভাবতে শুরু করার পরই পেন্টাগনের নজরে পড়েন তিনি।টেসলার পক্ষে তাদের প্রত্যাখ্যান করা অসম্ভব ছিল।টেসলাকে তারা রাডারে শনাক্ত না হওয়া এমন একটি সাবমেরিন তৈরী করতে বলেছিল,যেটি তিনি সমুদ্রের নিচে খনিজ সম্পদ বের করার উদ্দেশ্য নিয়ে ডিজাইন করেছিলেন।তিনি "Rainbow" নামের একটি প্রজেক্টের ব্যাপারে ডিজাইন করেছিলেন যেটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরির মাধ্যমে সমুদ্রের নিচে কোন বস্তুকে অদৃশ্য করার সক্ষমতা ছিল। তার মৃত্যুর পরে তার সব ডকুমেন্টগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং পরর্বতীতে এই সব কিছুই প্রকাশ  করা হয় নি।

তিনি সাধারণ মানুষকে বুঝাতে চেয়েছিলেন বায়ুতে অফুরন্ত শক্তি বিদ্যমান।তিনি এমন একটি গাড়ি বানিয়েছিলেন যেটিতে তিনি গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের পরির্বতে তার উদ্ভাবিত অল্টারনেটিং কারেন্টের বৈদ্যুতিক মোটর বসিয়েছিলেন যা বায়ু থেকে শক্তি উৎপাদন করতে পারত এবং গাড়িটি প্রায় ঘন্টায় ১৫০ কি.মি বেগে চলার ক্ষমতা ছিল।বায়ুর শক্তি কিনতে টাকা ও ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির কারনে তার যন্ত্র মোটর গাড়িতে ব্যবহার করে বাজারজাত করা হয় নি। এই ঘটনাটির পরই কয়েকটি পত্রিকা আর্টিকেল প্রকাশ করে  দাবি করে, টেসলার সাথে অদৃশ্য শক্তি বা শয়তানের সর্ম্পক রয়েছে।এরপর কখনো তিনি এই মোটরটি কারও সামনে প্রর্দশন করেন নি।টেসলাকে অনেকে না চিনলেও টেসলা মোটরস নামের কোম্পানিকে সবাই চিনে যারা সবচেয়ে দ্রুত গতির ইলেক্ট্রিক স্পোর্টস  কার তৈরী করেছে।২০০৩ সালে, একদল প্রকৌশলী টেসলা মোটরস নামে একটি গাড়ি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন যেটি  প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক চালিত গাড়ি উদ্ভাবন করেছে । উদ্যোক্তা এবং ইঞ্জিনিয়ার ইলন মাস্ক 2004 সালে টেসলা কোম্পানির জন্য 30 মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেন।টেসলার ডিজাইন করা গাড়িটি সম্ভবত এলেন মাস্ককে এরূপ গাড়ি বানানোর ব্যাপারে আর্কষিত করেছিল যে কারণে টেসলাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ইলন মাস্ক তার কোম্পানির নাম টেসলা মোটরস দেন।
ইলন মাস্ক ও টেলসা মোটরস কতৃক নির্মিত ব্যয়বহুল ইলেকক্ট্রিক কারগুলির একটি।

১৯১৫ সালে নোবেল কমিটি টেসলাকে নোবেল প্রাইজ দেওয়ার জন্য মনোনীত করেছিল।কিন্ত তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।কারণ তারা এডিসনের সাথে যৌথ ভাবে দিতে চেয়েছিল।হ্যাঁ, এডিসনকেও নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয় নি।এডিসনের প্রতি তার প্রচন্ড ঘৃনা ছিল।টেসলাকে  যখন এডিসন মেডেল দেওয়া হয়েছিল তখন তিনি মেডেলটি দুইভাগে কেটে তার ল্যাবের দুই কর্মচারীদের ভাগ করে দেন।

ছোটবেলা একবার তিনি ঝড়ের সময় একটি গাছের কাছে দাড়িয়েছিলেন।গাছের উপর  বজ্রপাতে সময় তিনি নিকটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার কাছে মনে হয়েছিল তার ভিতর দিয়ে বজ্রপাত মাটিতে চলে গিয়েছে কিন্তু তার কাছে বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে।তিনি নিজেকে বজ্রপাতের একটি অংশ হিসেবে ভাবতেন যার কারনে তার বিদ্যুৎ নিয়ে এত আর্কষন ছিল।তিনি অনেক গোপনীয় রহস্যের উদঘাটন করতে পেরেছিলেন যার কারনে তিনি এত শক্তিশালী সব পরীক্ষা করতে পেরেছিলেন যা অন্য কারও পক্ষে কল্পনাতেও আনা সম্ভব ছিল না।তাছাড়া বর্তমানের উন্নত সব প্রযুক্তি সর্ম্পকে তিনি আগেই ধারণা দিয়ে গিয়েছিলেন যা অনেকাংশেই মিলে গেছে তার দেওয়া ভবিষ্যৎবানীর সাথে।তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের স্ত্রী এলেনা রুজভেল্ট যখন দেখা করতে চেয়েছিলেন, তিনি এতে রাজি ছিলেন না।দেখা করার ঠিক একদিন আগে বড় একটি রহস্যের জন্ম দিয়ে তিনি মৃত্যুবরন করেন।তার মৃত্যু আগে ২ দিন দরজায় সাইনবোর্ড ঝুলানো ছিল যেটিতে লেখা ছিল "Don't disturb me". 7 জানুয়ারি 1943 সালে পৃথিবীর এই মহান বিজ্ঞানী করোনারি থ্রম্বসিস এ মারা যান।

তবে এমনটিও ধারণা করা হয়, টেসলা তখন মারা যান নি,বরং কিডন্যাপ হয়েছিলেন এবং অন্য একটি মৃতদেহকে দিয়ে টেসলার শেষকৃত্য সম্পুর্ন করা হয় এবং যথেষ্ট গোপনীয়তা রক্ষা করে দাহ করা হয়।স্পেশাল ফোর্স বাহিনী সম্পুর্ন হোটেল তল্লাসী করে ও টেসলার সব ডকুমেন্টস জব্দ করে।পরে ঘোষণা করে জানানো হয়, এই সব ডকুমেন্টসগুলি একজন বিজ্ঞানীর দার্শনিক চিন্তা-ভাবনার ফলাফল।অনেক বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস  করেন, টেসলার অনেক আবিষ্কার নিয়ে এখনও গবেষনা হচ্ছে তন্মধ্যে fuel free generator of energy,Teleportation,Artificial intelligence,Military lesar ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ধারনা করা হয় তিনি অবসেসিভ কম্পলসিভ ডিসঅর্ডার নামের পৃথিবীর এক বিরল মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
নিকোলা টেসলাকে নিয়ে বিস্তারিত জানার পর মনে হয়েছে তার প্রতি নিশ্চিতভাবে অবিচার করা হয়েছে  এবং তিনিই আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলে বিবেচিত হয়েছেন।

Post a Comment

0 Comments

Ad Inside Post

Comments system