টেলিভিশন আবিষ্কারের পিছনের অদৃশ্য যুদ্ধ।



বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে টেলিভিশন যেটি আমেরিকার ইডাহোর রিগবির একটি জলাবদ্ধ মাঠের পাশের খামারে বসে কল্পনা করা হয়েছিল। আবিষ্কারক ছিলেন ১৫ বছর বয়সী বালক ফিলো টেলর ফার্নসওয়ার্থ যিনি বাবার সাথে চাষাবাদের পাশাপাশি পড়াশোনা করেতেন।যদিও টেলিভিশন দ্রুত বিশ্বকে বদলে দিয়েছে , তবে এর উদ্ভাবক অনেকাংশেই  অজানা রয়ে গেছেন।যেভাবে এডিসন, মার্কনি কিংবা বেলের নাম যথাক্রমে হালকা বাল্ব, রেডিও এবং টেলিফোনের সাথে পৃথিবীতে পরিচিতি পেয়েছে টেলিভিশনের ক্ষেত্রে তা একদমই ব্যাতিক্রম।আমরা যদি জিজ্ঞাসা করি: টেলিভিশন কে আবিষ্কার করেছেন? উত্তরটি আসন্ন নাও হতে পারে। অনেক নাম টেলিভিশন আবিষ্কারের সাথে যুক্ত আছে যেমনঃ নিপকো, বেয়ার্ড, জারকিনস, জুওয়ারিকিন এবং আরও কয়েক ডজন। কিন্তু ফিলো টেলর ফার্নসওয়ার্থই তাদের চেষ্টার সমাপ্তি টেনেছিলেন যেজন্য তাকে "father of television"বলা হয়।টেলিভিশনের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন ফ্রান্সওয়ার্থ যিনি সর্বপ্রথম আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোতে ১৯২১ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর প্রথম বৈদ্যুতিক টেলিভিশন দেখিয়েছিলেন।তবে পূর্বে জন বেয়ার্ড ও চার্লস ফ্রান্সিসও টেলিভিশন প্রদর্শন করেছিলেন তবে তা অনেকাংশেই অসম্পূর্ণ ছিল। পরর্বতীতে ফার্ন্সওয়ার্থের আবিষ্কারটি ছবিকে ইলেকট্রনের মরিচী দিয়ে স্ক্যান করেছিল যেজন্য তাকে আধুনিক টেলিভিশনের প্রত্যক্ষ পূর্বপুরুষ বলে গন্য করা হয়।এছাড়াও তিনি বৈদ্যুতিক মাইক্রোস্কোপ, রাডার, পারমাণবিক শক্তির শান্তিকালীন ব্যবহার এবং পারমাণবিক ফিউশন প্রক্রিয়া উন্নয়নের কাজও করেছিলেন। তিনি প্রথম শিশু ইনকিউবেটর আবিষ্কার করেছিলেন। ফার্নসওয়ার্থের ৩০০টির বেশী  মার্কিন ও বিদেশী পেটেন্ট ছিল। জীবনের শেষদিকে তিনি হতাশা, মদ্যপান এবং অসুস্থতার কারণে মারা যান। মৃত্যুর সময় তিনি দেউলিয়া ছিলেন এবং তিনি তাঁর প্রাপ্র‍্য সম্মানটুকুও পান নি। কিন্তু পরর্বতীতে ইতিহাস তার ভুল সংশোধন করেছে এবং ফার্নসওয়ার্থকে তার প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।  তাঁর ভাস্কর্য ইডাহো এবং ওয়াশিংটন ডিসি-তে তৈরি করা হয়েছে।কুইরহ পর্বতমালার শীর্ষে যেখানে ইডাহোর টেলিভিশন স্টেশন অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়েছে সেটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিন ফার্নসওয়ার্থকে বিশ শতকের একশত দুর্দান্ত বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদদের মধ্যে একজন হিসেবে নাম দিয়েছে। ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট তাকে বিমানের আবিষ্কারক রাইট ব্রাদার্স এবং পারমানবিক বোমার জনক জে রবার্ট ওপেন হেইমারের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম সেরা উদ্ভাবক হিসাবে অভিহিত করেছে।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে একটি নতুন যন্ত্রের আর্বিভাব হয় যার নাম রেডিও।রেডিও প্রথমেই সম্পূর্ণ আমেরিকা তথা পুরো পৃথিবীকে পাল্টে দেয়।অনেক কিছুই আমেরিকাতে একসাথে উদযাপন হওয়া শুরু হয়ে যায় রেডিওর কল্যানে।এর আগে ওয়াশিংটনে কোন ঘটনা ঘটলে সেটা ক্যালিফোর্নিয়া বা অন্য কোন রাজ্যে পৌছাতে সময় লাগত কয়েকঘন্টা বা কয়েক দিন।কিন্তু রেডিওর কল্যানে সবকিছুই বদলে যায়।রেডিও বাস্তবিক অর্থেই সম্পুর্ন দেশকে এমনভাবে একত্রিত করে যা আগে সম্ভব হয় নি।

একজন মানুষ এই রেডিও শিল্পে সম্ভাবনা দেখেন এবং তা নিয়ন্ত্রন করতে আগ্রহী হন।তার নাম ডেভিড সার্নফ।তিনি হলেন আমেরিকার সবচেয়ে বড় রেডিও সম্প্রসারন সংস্থার চেয়ারম্যান।তিনি তার প্রানের সংস্থা ও তার কাজকে এতটাই ভালবাসতেন যার জন্য যেকোন প্রতিবন্ধকতা সহ্য করতেন না।যে কোন উপায়ে প্রতিবন্ধকতা পার হতেন।সময়ের সাথে রেডিওর জনপ্রিয়তা যত বাড়তে থাকে, তার ব্যবসার লাভও বাড়তে থাকে।তিনি এমন এক উচ্চতায় পৌছে যান যা সত্যিই বিস্ময়কর ছিল এবং তিনি রেডিওর একটি বিশাল সাম্রাজ্য তৈরী করেন।

কিন্তু অন্যদিকে হাজার মাইল দূরে গরীব এক চাষীর ছেলে এমন একটি ধারণা নিয়ে ভাবছে যা রেডিওকে বিলুপ্ত করে দিতে পারে।১৪ বছর বয়সী ফাইলো ফ্রান্সওয়ার্থ এর ইলেকট্রনিক্স নিয়ে গবেষনা ছিল নিত্য দিনের অভ্যাস।সে ছিল লাজুক,চুপচাপ কিন্তু এক অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারী।রেডিও নিয়ে নাড়াচাড়া করাই ছিল অবসর কাটানোর প্রধান শখ।টেসলা,এডিসন,রাইট ব্রাদারদের মত মহান বিজ্ঞানীরা ছিল তার আর্দশ।তার মূল লক্ষ্য ছিল রেডিওর সাথে সচল ছবি যোগ করা ৷ স্কুল এবং বাবার সাথে চাষাবাদের কাজের পর সে এই বিষয়ে কাজ করতে থাকে প্রতিদিন।
 কিন্তু  সে বুঝে উঠতে পারছিল না কিভাবে সে তার স্বপ্ন পূরন করবে?
বিস্ময়কর  প্রতিভাবান বালকের মাথায়  হঠাৎ করে বুদ্ধি আসে এমন একটি যন্ত্র নির্মান করা সম্ভব যা ছবিকে লাইন বাই লাইন স্ক্যান করবে যেমনটি আমাদের চোখ বইয়ের পাতাকে করে থাকে।
রিকভী হাই স্কুলের ছাত্রটি স্কুল এবং চাষাবাদের কাজের পর তার স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য কাজ করতে থাকে।

সৃষ্টি কাজে সময় নামক অতিপ্রয়োজনীয় ব্যাপারটার কথা মাথায় থাকে না।সে তার ধারনাটি সর্ম্পকে তার স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষককে বিস্তারিত বলে ও কাগজে বিষয়টি সর্ম্পকে নকশা একে দেখায়।গ্রামের  একজন সাধারণ স্কুল শিক্ষক  বিষয়টিকে অবিশ্বাস্য বলে মনে করে এবং উৎসাহ দেওয়া শুরু করে।কিন্তু শিক্ষক বিশ্বাস করতে পারছিল না কারন পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীরা যেখানে এই বিষয় নিয়ে কাজ করে ব্যর্থ হয়ে গেছে সেখানে এই ছোট্ট এই বালকটি কিভাবে সমাধান বের করে ফেলল।শিক্ষক তখন ফ্রান্সওয়ার্থ কে বলেছিল-"কাকে বিশ্বাস করবে  সে সর্ম্পকে  সর্তক থেক"এবং স্কুল শিক্ষক তখন ছাত্রের কাছ থেকে নকশার কাগজটি সযত্নে রেখে দিল।
৪ বছর দিন-রাত চেষ্টার পর সে তার নকশাটি সূক্ষভাবে তৈরী করে ফেলে এবং বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য ইডাহো ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় আসে এবং তার স্ত্রীকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করে।
হঠাৎ করে একদল বিনিয়োগকারী ফ্রান্সওয়ার্থের সন্ধান পায় ও তার সাথে চুক্তি করতে চায়।সে তাদের বলে এটি বাতাসে অদৃশ্য তরংগের মাধ্যমে ছবিকে পরিচালিত করতে পারে এবং এটির নাম টেলিভিশন।  ২৫ হাজার ডলার ও ৬০% শেয়ারে ফ্রন্সওয়ার্থ রাজি হয়ে যায় তখনই কারন টেলিভিশন তৈরী ও সারা পৃথিবীতে পৌঁছে দিতে অনেক অর্থের প্রয়োজন।

একজন আবিষ্কারকই পারেন তার স্বপ্ন মনে প্রানে ধারন করতে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে বছরের পর বছর।ঠিক তেমনি তিনি অনেক চেষ্টার পর অবশেষে সফল হন এবং তার সাথে চুক্তিকারীদের তিনি টেলিভিশন চালিয়ে দেখান।চুক্তিকারীরা তখন বুঝতে পেরেছিল তার আবিস্কার পুরো দুনিয়াকে বদলে দিবে  এবং তারা অনেক দামে যন্ত্রটি বিক্রি করার কথা বলে ।কিন্ত ফার্ন্সওয়ার্থ তাদের বলে আমরা যন্ত্রটি আমাদের হাতছাড়া করব না এবং ধীরে ধীরে যন্ত্রটি উন্নত করব।তিনি টেলিভিশনয়ের নিয়ন্ত্রক হতে চেয়েছিলেন এবং টেলিভিশন নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষনা করে  যন্ত্রটিকে আরও অনেক উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তিনি তার আবিষ্কারকে  মানবসভ্যতার কল্যানের জন্য ব্যবহার করার কথা ভাবতে শুরু করলেন যেমনটি একজন সত্যিকারের আবিষ্কারকের মূল উদ্দেশ্য  হয়ে থাকে।
আসলে তিনি হতে চেয়েছিলেন টেলিভিশনের  এডিসন যিনি নিজে ডি.সি কারেন্ট আবিষ্কার করে তা নিজের কোম্পানির দ্বারা তা পরিচালিত করতেন।

ফ্রান্সওয়ার্থ তখন প্রেস কনফারেন্স করে সবাইকে জানান এবং যন্ত্রটির পেটেন্ট এর জন্য আবেদন করতে থাকেন।ঠিক তখনি বিষয়টি পত্রিকায় আসে এবং খবরটি গিয়ে পৌছায় রেডিও কোম্পানির মালিক সার্নফের কাছে।সায়ানফ তখনি বুঝতে পারে এটির আবিষ্কারের পরে রেডিওর ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে।মানুষের কাছে  রেডিও একটি সাধারণ বস্তু হয়ে যাবে।  তাই তিনি ফ্রান্সওয়ার্থয়ের আবিষ্কারকে আটকানো, পেটেন্ট আটকানো,তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ আনা সহ একের পর এক এমন সব ষড়যন্ত্র ও কাজ করতে  থাকেন যা সত্যিই চরম ঘৃনার কাজ হিসেবে গন্য করতে হয়।আর এভাবে এতকিছু সহ্য করে একজন আবিষ্কারকের  সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ কতটা দূর্গম সেটা একমাত্র ফ্রান্সওয়ার্থই বুঝতে পেরেছিলেন। হাতাশার চাদরে মোড়ানোর পরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার যুদ্ধে টিকে থেকেছিলেন শেষ পর্যন্ত।

ফিলো ফ্রান্সওয়ার্থের টেলিভিশন আবিষ্কার এবং পেটেন্টের জন্য আবেদনের সংবাদ পত্রিকায় জানার পর ডেভিড সার্নফের হৃদপিন্ডে কাপঁন শুরু হয়ে গিয়েছিল। সার্নফ তখন  ফ্রন্সওয়ার্থকে আটকানোর চিন্তা করতে থাকলেন।কিন্তু ফ্রান্সওয়ার্থের মত মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করতে হলে সার্নফকে অবশ্যই ফ্রান্সওয়ার্থের চেয়ে বুদ্ধিমান কাউকে দরকার সেটি বুদ্ধিমান সার্নফ প্রথমেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।তাই তিনি এমন কাউকে খুজতে শুরু করলেন যে ফ্রান্সওয়ার্থের নামে টেলিভিশন আবিষ্কারের পেটেন্ট  প্রকাশ হওয়ার আগে টেলিভিশন আবিষ্কার করে আরসিএকে দিতে পারবে যাতে সার্নফ তার কোম্পানির দ্বারা রেডিওর মত ব্যবসা করতে পারে।তিনি টেলিভিশনের ভবিষ্যৎ জনপ্রিয়তার কথা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন কারন তিনি যথেষ্ট চতুর ছিলেন।

তিনি তখন খোঁজ  পেলেন ভ্লাদিমির জোয়ার্কিন নামক এক রাশিয়ান বিজ্ঞানীর যে আরসিএ কোম্পানীর হয়ে কাজ করতে রাজি হয়েছিল।ফ্রান্সওয়ার্থের চুক্তিকারীদের থেকে চারগুন বেশি পারিশ্রমিক দিতে রাজি হয়েছিল সার্নফ।ভ্লাদিমির জোয়ার্কিন আগে একটি ইলেকট্রনিক টেলিভিশন আবিষ্কারের চেষ্টা করেছিলেন কিন্ত তার যন্ত্রটি কাজ করেছিল না।আবার সেটিতে  তারবিহীন প্রযুক্তিও ছিল না ফ্রান্সওয়ার্থের মত।তিনি টেলিভিশন আবিষ্কারের কাজ থেকে দূরে  সরে গিয়েছিল।সার্নফের আর্থিক সুবিধার কথা শুনে ভ্লাদিমির জোয়ার্কিন আবার গবেষনা করতে রাজি হয়েছিলেন।কিন্ত ফ্রান্সওয়ার্থ আবিষ্কার শেষ করে পেটেন্টের স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষায় তখন।অন্যদিকে রাশিয়ান বিজ্ঞানী  ভ্লাদিমির জোয়ার্কিন অনেক সময় দরকার যন্ত্রটি নিয়ে ব্যাপক গবেষনা করে এমন একটি যন্ত্র তৈরী করতে।তাই সার্নফ  আদালতে অভিযোগ করলেন যে ফ্রান্সওয়ার্থ জোয়ার্কিনের আগের তৈরী করা যন্ত্রের নকশা চুরি করে টেলিভিশন আবিষ্কার করেছেন। ফ্রান্সওয়ার্থ যাতে পেটেন্ট না পায় এবং তার নামে পেটেন্ট ঘোষণা যেন স্থগিত থাকে আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত এই জন্য সার্নফ এমন একটি মাষ্টারপ্ল্যান করেন।আদালতে যখন ফ্রান্সওয়ার্থকে বাদীপক্ষরা কোনঠাসা করে ফেলল ঠিক তখন  নাটকীয় মুহুর্তে সাক্ষী দিতে  উপস্থিত হয় ফ্রান্সওয়ার্থের সেই স্কুল শিক্ষক যাকে সে ১৯২২ সালে টেলিভিশন যন্ত্রটির কথা বলেছিল।
স্কুল শিক্ষককে তখন প্রশ্ন করা হয়ঃ
উকিল ঃআপনি ফ্রান্সওয়ার্থকে কিভাবে চিনেন?
শিক্ষকঃসে ইভাহোতে আমার স্কুলের একজন ছাত্র ছিল।
উকিলঃআপনি কি মনে করেন ১৯২২ সালে আপনাকে যে যন্ত্রটির কথা সে বলেছিল সেটির কি কোন ভিত্তি আছে??আপনি কেন একজন ছাত্রের ধারণাকে এত গুরুত্ব দিলেন এবং এখানে সাক্ষী দিতে আসলেন?আমার ত মনে হয় ফ্রান্সওয়ার্থের ঔ সময়ের ধারনার সাথে এখনকার আবিষ্কারের কোন মিল নেই এবং সে জোয়ার্কিনের  ধারণা চুরি করে এটি আবিষ্কার করেছে। আপনি বড় কোন ডিগ্রি ছাড়া রসায়নের শিক্ষক হয়ে পদার্থের এত জটিল বিষয় সম্পর্কে কিভাবে বুঝতে পারলেন??
শিক্ষক ঃআপনার এত প্রশ্নের উত্তর  দেওয়ার জন্য একটি প্রমানই যথেষ্ট।ফ্রান্সওয়ার্থ আমাকে তখন ১৯২২ সালে একটি নকশা একে দিয়েছিল।কাগজটি বের করে প্রমান হিসেবে তিনি আদালতে দাখিল করলেন।
আদালতে কাগজটি তখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় এবং ১৯২২ সালের নকশা সাথে আবিষ্কৃত টেলিভিশনের  অনেক মিল খুজে পাওয়া যায়।
আদালতে ফ্রান্সওয়ার্থকে জয়ী ঘোষনা করা হয় এবং ফ্রান্সওয়ার্থকে টেলিভিশন তৈরী করে বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হয়।আসলে এটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কারন স্কুল শিক্ষক তার প্রিয় ছাত্রের কথা মনে রেখেছিল এবং প্রিয় ছাত্র বিপদে পড়তে পারে ভবিষ্যতে, সেই জন্য কাগজটি রেখে দিয়েছিল তার নিজের কাছে প্রমান হিসেবে।

কিন্তু টেলিভিশন আবিষ্কারের যুদ্ধ তখনও শেষ হয়ে যায় নি।সার্নফ আদালতে হার মানলেও নিজে হার মানতে রাজি ছিলেন না।।সার্নফ তার ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক সমস্ত শক্তি ব্যয় করেছিলেন ফ্রান্সওয়ার্থকে আটকানোর জন্য।তিনি ফ্রান্সওয়ার্থের সকল অর্থনৈতিক সুবিধা আটকে দিতে চাইলেন তার প্রভাব খাটিয়ে যাতে ফ্রান্সওয়ার্থ টেলিভিশন তৈরী ও বিক্রি করতে না পারে ঠিক ততদিন পর্যন্ত যতদিন জোয়ার্কিন সার্নফের জন্য একটি সচল টেলিভিশন আবিষ্কার করতে না পারে। তিনি এতে সফলও হলেন।

ঊনবিংশ শতাব্দীর সেরা কয়েকজন শিল্পপতির একজন ছিলেন ডেভিড  সার্নফ।তিনি বিপুল পরিমান অর্থ, মেধা, শ্রম সবকিছুই  করতে রাজি ছিলেন টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রক হওয়ার জন্য।তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে জোয়ার্কিন ও তার সহযোগীরা  ফ্রান্সওয়ার্থের মত একটি টেলিভিশন আবিষ্কার করলেন।সার্নফ তখন খরচ করেছিলেন বর্তমানের  হিসেবে প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার শুধুমাত্র তার বিরোধী ফ্রান্সওয়ার্থকে  আটকানোর জন্য।অন্যদিকে এর ১০ভাগেরও  কম খরচ করেছিলেন ফ্রান্সওয়ার্থ তার আবিষ্কৃত টেলিভিশনের পিছনে।

ফ্রান্সওয়ার্থ ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে  দৈনিক  প্রায় ১৮ ঘন্টা করে কাজ করছিলেন।তিনি প্রচন্ড চাপ নিয়ে বাইরের সকল প্রতিকূল অবস্থার সাাথে মোকাবেলা করে   কাজ করছিলেন।সাথে অনেক ব্যাক্তিগত সমস্যাও পড়েছিলেন।তিনি মদ্যপান করে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করছিলেন।

অন্যদিকে  সার্নফ প্রস্তুত জোয়ারকিনের সৃষ্টিকে জনসম্মুখে আনতে।তার নিজের ব্যাক্তিগত সকল শক্তির জোরে এবং নিজে রেডিও কোম্পানির মালিক হওয়ার সুবাদে ১৯৩৯ সালে নিউইয়র্কে একটি বিশেষ দিনে ঘোষণা দিয়ে প্রায় ৪ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের সাথে প্রথমেই পরিচয় করিয়ে দেন  টেলিভিশনকে।
অবশেষে যুদ্ধে পরাজিত হন ফ্রান্সওয়ার্থ।আদালতের অনুমতি থাকার পরও তিনি কিছুই করতে পারছিলেন না কারন তার সকল শক্তি তিনি টেলিভিশন আবিষ্কারের পিছনে খরচ করে ফেলেছিলেন।
কিন্তু জনগনের সামনে জয়ের পরও সার্নফ তার তৎকালীন মডেলটি নিয়ে  সন্তুষ্ট ছিলেন না।তাই জোয়ারকিন কাজ করতে থাকেন এবং ২য় একটি টেলিভিশন তৈরী করেন।কিন্তু এটি তৈরী করতে তাদের ফ্রান্সওয়ার্থের নকশার উপাদান ব্যবহার করতে হয়েছিল।যে কাজটি আরসিএ কোনদিন করবে না বলেছিল সে কাজটিই সার্নফের করতে হয়েছিল।
তাই সার্নফ তার উকিলদের বলেছিলেন, ফ্রান্সওয়ার্থের থেকে পেটেন্টের অধিকার কেনার ব্যবস্থা করতে। ফ্রান্সওয়ার্থও সবসময় চেয়েছিলেন তার আবিষ্কারের মূল্য পেতে।কিন্তু এমন সময় ভাগ্যও তার সাথে খেলায় যোগ দিল।

৭ ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ এ আমেরিকা ২য় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরী হয় এবং যুদ্ধের যোগান বড় বড় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দিতে হয়েছিল।এসব কারনে প্রায় ৬ বছর টেলিভিশন উৎপাদন বন্ধ থাকে।
১৯৪৬ সালে ফ্রান্সওয়ার্থের পেটেন্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ফলে তার আবিষ্কার করা নকশায় যে কেউ টেলিভিশন তৈরী করে বিক্রি করার বাধাও শেষ হয়ে যায়।ফলে ফ্রান্সওয়ার্থও তার আবিষ্কারের মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।

যুদ্ধের পরপরই সার্নফ টেলিভিশন উৎপাদন শুরু করে এবং পরের ২ বছরেই সেটি অকল্পনীয়  সাফল্য  লাভ করে।টেলিভিশন মানব ইতিহাসে জায়গা করে নেয় যখন চাঁদে মানবসভ্যতার পদচিহ্নের সম্প্রচার
হয় টেলিভিশন দ্বারা। যে কোটি কোটি দর্শক এই কালজয়ী ঘটনা টেলিভিশন দ্বারা দেখেছিলেন তাদের একজন ছিলেন ফ্রান্সওয়ার্থ।তিনি হাস্যজ্বল মুখেই সেই ঘটনাটি টেলিভিশন দ্বারা উপভোগ করেছিলেন কারন তিনি বলেছিলেন, আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে টেলিভিশন আবিষ্কার করেছিলাম তা আজ সফল হয়েছে।মূলত চারপাশের সকল ঘটনাকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যই ছিল তার আবিষ্কারের মূল লক্ষ্য।আর এটার তার আবিষ্কারের সার্থকতা।

ডেভিড সার্নফ  হলেন সেই ব্যাক্তি যিনি মানুষকে ইলেকট্রনিক  টেলিভিশনের সাথে পরিচয় করে দিয়েছিলেন কিন্তু ইতিহাস সবসময় ফিলো-টেলর- ফ্রান্সওয়ার্থকেই স্মরন করবে বিংশ শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের স্রষ্টা হিসেবে।(ভাল লাগলে পেইজে লাইক ও শেয়ার দিবেন।)

Post a Comment

0 Comments

Ad Inside Post

Comments system