মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টপতি নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

 

জর্জ ওয়াশিংটন
ছবিঃ জর্জ ওয়াশিংটন 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাসের কিছু অংশ নিয়েই আজকের এই পর্ব।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট নির্বাচন শুরু হয় ১৭৮৯ সালে।জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ১ম রাষ্ট্রপতি যাকে বলা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক বা আদি পিতা।কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় বা সফলতম প্রেসিডেন্ট কে?যদিও উত্তরটি মনে হতে পারে জর্জ ওয়াশিংটন কিন্তুু উত্তরটি তা নয়।এটির দ্বারাই প্রমান হয় যুক্তরাষ্ট্রের গনতন্ত্র কতটুকু শক্তিশালী।এবার বিস্তারিত কিছু  আলোচনা শুরু করা যাক।

১৭৮৩ সালে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর জর্জ ওয়াশিংটন ক্ষমতা দখল না করে সর্বাধিনায়ক পদ থেকে অব্যাহতি  নেন যা থেকে সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে তিনি সত্যিকার অর্থেই একটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন।১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত সাংবিধানিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ও পরর্বতীতে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সর্বসম্মতভাবে পর পর ২ বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়।তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১ম রাষ্ট্রপতি ও তাকে সেরা ২ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের একজন হিসেবে গন্য করা হয়।

আব্রাহাম লিংকন
ছবিঃআব্রাহাম লিংকন  


যদিও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রসিডেন্ট হলেন ১৬ তম প্রসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। তিনিই প্রথম দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার পক্ষে এজেন্ডা নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। অভ্যন্তরীণ রাজ্যগুলোর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধ বন্ধ করেন ও ১৮৬৩ সালে দাস প্রথা বিলুপ্ত আইন পাশ করেন।লিংকনের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার জন্য আমেরিকা বিভক্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিল।আব্রাহাম লিংকন রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে হুইগ পার্টির নেতা হিসেবে আট বছর ও ২ বছর কংগ্রেসে কাজ করেন।পরর্বতীতে তিনি পুনরায় ফিরে যান আইন পেশায়।কিন্তু ডেমোক্রেটিকরা যখন গ্রেগরি ল্যান্ডে দাসপ্রথা চালু করে, তখন লিংকন রাগান্বিত হয়ে আবার রাজনৈতিক জীবনে ফিরে আসেন এবং ১৮৬০ সালের নির্বাচনের টিকেট পান।তিনিই হলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রতিষ্ঠাতা যেই দল দাস প্রথা বিলুপ্ত করেছিল ও আলাদা হয়ে যাওয়া রাজ্যগুলিকে আবার একত্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে রক্ষা করেছিল।এই দল থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু আব্রাহাম লিংকনের সাথে যার নীতিগত পার্থক্য সুস্পষ্ট।দাসপ্রথা বিলুপ্ত ও দাসদের মুক্তির আইন পাশ ও আলাদা হয়ে স্বাধীনতার ডাক দেওয়া রাজ্য গুলিকে একত্রিত করার জন্যই উইলকস বুথ নামক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।আব্রাহাম লিংকন ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩ সালে এক স্মরণসভায় একটি সংক্ষিপ্ত ও দুনিয়া কাঁপানো ভাষণ  দিয়েছিলেন যা ছিল  মাত্র দুই মিনিটের।২৭২ শব্দের এই বিখ্যাত ভাষণটি গেটিসবার্গ স্পিচ নামে পরিচিত।এটি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ।এই ভাষণের সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হলো মাত্র একটি বাক্যে লিংকন গণতন্ত্রের নিখুঁত সংজ্ঞা দিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে, ‘গণতন্ত্র হলো জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার, জনগণের জন্য সরকার’।কিন্তু ট্রাম্পের মত একজন বর্নবাদীকে  লিংকনের রিপাবলিকান পার্টির দায়িত্ব তুলে দেওয়াটা এটাই প্রমান করে তারা তাদের আর্দশ থেকে অনেক দূরে চলে এসেছে যদিও তারা বরাবরই রক্ষনশীল নীতিতে অটল থাকে।এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ জন রিপাবলিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।ডেমোক্রেটিক পার্টির জনপ্রিয় একজন প্রসিডেন্ট হলেন ৩২ তম প্রসিডেন্ট ফ্র্যাংক্‌লিন্‌  রুজভেল্ট।তিনি একটানা ১২ বছর প্রসিডেন্ট ছিলেন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবক ছিলেন।লিংকন ও ও ওয়াশিংটনের পর তাকে ৩য় জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে গন্য করা হয়।১৯৬০ সালে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রবল জজনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন জন এফ কেনেডি।কিন্তু মাত্র তিন বছর ক্ষমতায় থাকার পর লিংকনের মত তিনিও আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।১৯৬৮ সালে রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচিত হন রির্চাড নিক্সন।তিনি পরর্বতীতে এতটাই জনপ্রিয় হন যে ২য় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা ভোট জয় করেন।রিপাবলিকান দলের আরেকজন তুমুল জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হলেন রোনাল্ড রিগ্যান।এরপর ১৯৮৮ সালে ক্ষমতায় আসেন সুপরিচিত জর্জ বুশ।তিনি ২ বার নির্বাচিত হলেও তার যুদ্ধবাজ নীতির জন্য তিনি পরর্বতীতে তার জনপ্রিয়তা অনেকটাই হারান।মূলত এই কারনে অনেক বছর পর আবার ক্ষমতায় আসে ডেমোক্রেটিকরা।১৯৯২ সালে নির্বাচিত হন ডেমোক্রেটিক নেতা বিন ক্লিনটন।এইপর ২০০০ সালে আবার নির্বাচিত হন রিপাবলিকান নেতা জর্জ বুশের ছেলে জর্জ ডব্লিউ বুশ।২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় আসে ডেমোক্রেটিকরা ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বারাক ওবামা।তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট তালিকা ১২ নম্বরে রয়েছেন।এরপর আবার ২০১৬ সালে নির্বাচিত হন রিপাবলিকান পার্টি থেকে সমালোচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প।যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ২য় বার নির্বাচিত হতে না পারা কয়েকজন প্রসিডেন্টের তালিকার সর্বশেষ হলেন তিনি।এরআগে মাত্র ১১ জন প্রসিডেন্ট ২য় বার নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয়েছেন।বেশিরভাগই সফল হয়েছেন।ট্রাম্পের খেয়ালিপনার জন্য আবার নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক দল থেকে জো বাইডেন।জো বাইডেন সহ ডেমোক্রেটিক দল থেকে এ পর্যন্ত ১৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন।বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম প্রসিডেন্ট ও সবচেয়ে বেশি বয়সের নির্বাচিত প্রসিডেন্ট।

Post a Comment

0 Comments

Ad Inside Post

Comments system